ঢাকার নবাবগঞ্জের শিক্ষাদাত্রী মাধুরী বণিককে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া উচিৎ বলে দাবী জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার নবাবগঞ্জের শিক্ষাদাত্রী মাধুরী বণিককে সংবর্ধনা প্রদান, শিশুদের রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভায় তিনি এ দাবী জানান।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলার পানালিয়া গ্রামের মাধুরী বণিকের গাছতলার স্কুলে একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মুল কমিটি এ আয়োজন করেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে শিক্ষাদাত্রী মাধুরী বণিককে সংবর্ধনা দিতে এ আয়োজন। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির ১০জন নেতা এখানে এসেছি। আমরা মনেকরি মাধুরী বণিককে জাতীয় পর্যায়ে সংবর্ধনা জানানো উচিত। স্বাদীনতা পুরস্কার কারা পান? আমরা জানি না। শিক্ষার জন্য মাধুরী বণিক যদি স্বাধীনতা পুরস্কার না পান, ধিক সে পুরস্কারকে। যারা এ পুরস্কার নিচ্ছেন, আর যারা এ পুরস্কার নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে সরষিনা পীরকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে লেখা সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল হামিদকেও স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাধুরী বণিকের মতো শিক্ষাদাত্রী যারা, যিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন একজন মানুষ, যাকে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করতে পারিনি। এটা রাষ্ট্রীয় লজ্জা, জাতীয় লজ্জা। এ লজ্জার কিছুটা আজকে আমরা ঘুচালাম। আমরা আশা করবো আগামীতে মাধুরী বণিককে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানো হবে।
মাধুরী বণিক স্থানীয়ভাবে নারী ও শিশু অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত। এলাকার শিশু ও নারী শিক্ষা বিস্তারে তার অনণ্য ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরের লেখক কলামে মাধুরী বণিককে নিয়ে কলাম প্রকাশ হয়। কলামটি একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির নজরে এলে তারা মাধুরী বণিকের খোঁজ নিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানালেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মাধুরী বণিককে সংবর্ধনা দিতে পেরে আত্মতুষ্টি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, এমন একটি মানুষের কাছে আসতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাধুরী বণিকের জন্য নগদ এক লাখ ৩ হাজার টাকা, সাড়ে ৭শত বই দেয়া হয়। এছাড়া সাংবাদিক মুন্নি সাহার পক্ষ থেকেও প্রায় ৭শ’ বই উপহার দেয়া হয় তার স্কুলের শিশু ও নারীদের পড়ার জন্য।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালান নির্মুল কমিটির সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামল নাসরিন চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্মুল কমিটির সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বারক আলভী, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর টাবী, জাগরণ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডের নির্বাহী সভাপতি মো. শওকত আলী, নির্মুল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি আসিফ মুনীর।
আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মুন্নি সাহা, নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আ. হালিম, নবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইব্রাহীম খলিল, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীর কেক কাটেন। তা শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শেষে অতিথিবৃন্দ মাধুরী বণিকের পৈত্রিক বাড়ি পরিদর্শন করেন। এসময় বাড়ি মেরামতসহ একটি স্কুল ও লাইব্রেরী করার জন্য ঘোষণা করা হয়।