সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের ওমিক্রনের নতুন উপধরন ‘বিএফ.৭’। সংক্রমণ বেড়ে চলেছে চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্বের প্রভাব এ দেশেও পড়তে পারে। সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণসহ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে চীন, ভারত, ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের বিমান ও স্থলবন্দরে হেলথ চেকআপ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জানা গেছে, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের নতুন উপধরন ‘বিএফ.৭’। এটি অতি সংক্রামক ও শনাক্ত করা কঠিন। এ কারণে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে ঠিক করতে জরুরি সভা করেছে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি চার দফা সুপারিশও করেছে। কারিগরি কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে গতকাল রোববার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘বিশ্বে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করে।
সভা শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসা করছে। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে জাতীয় কারিগরি কমিটির সভা করেছে। কমিটি চারটি বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছে।
ডা. আহমেদুল কবির বলেন, করোনার এই নতুন ধরন টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য বেশি ভয়াবহ। তাই যারা টিকা নেয়নি, তাদের দ্রুত নিয়ে নেওয়ার জন্য কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সেকেন্ড বুস্টার ডোজের প্রচার বাড়াতে বলেছে কমিটি। সম্মুখসারির কর্মী, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ষাটোর্ধ্বদের দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কারিগরি কমিটি বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সব বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে জানিয়ে আহমেদুল কবির বলেন, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ইতোমধ্যে দেশের বন্দরগুলোতে চিঠি দিয়েছেন। যেসব দেশে করোনা শনাক্ত করা হচ্ছে, সেসব দেশ থেকে যারা আসবেন, তাদের মধ্যে উপসর্গ থাকলে দ্রুত পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করে আইসোলেট করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’
কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, করোনা সংক্রমণের নতুন উপধরন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের সতর্ক হতে হবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে সতর্কতা নেই বললেই চলে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে একদম ভুলে গেছে। যেহেতু সংক্রমণ বাড়ছে, আবারও পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। একই সঙ্গে আবারও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বুস্টার ডোজ যারা নেয়নি, তাদের দ্রুত টিকা নিতে হবে।
‘টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকি বেশি। কোমরবিডি কন্ডিশন যাদের রয়েছে, তারাও কিন্তু ঝুঁকিতে আছেন। তাই সবাইকে টিকা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি বলেন, ডিএনসিসিসহ যেসব করোনা হাসপাতাল রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা মিটিং করছি। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছি। আইসোলেশন ইউনিটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। অধিদপ্তর সব বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে।
বিমানবন্দরসহ সব স্থলবন্দরে চিঠি
করোনার সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমান ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি চীন, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণ দেখা গেছে। প্রতিবেশী দেশসমূহে সংক্রমণ বাড়লে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। করোনার নতুন উপধরন বিএফ.৭ অত্যন্ত সংক্রামক। এর সংক্রমণ এড়াতে এবং দেশের জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় দেশের সব নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিল, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
দেশে করোনা সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনার সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সেটিকে স্বাভাবিক বা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে গণ্য করা হয়। এখন বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে। এখন করোনার নতুন একটি উপধরনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। যেসব দেশে সংক্রমণ বাড়ছে সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে তাতে সংক্রমণ বাড়তে।
২৪ ঘণ্টায় ১ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৬ জন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৮৮৩টি ল্যাবরেটরিতে ১ হাজার ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৬ জন। ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২৪ জন। মোট পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মৃত্যু ২৯ হাজার ৪৩৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।